৬ষ্ঠ শ্রেণির কৃষি শিক্ষা ১৪শ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান
বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়তি মানুষের খাদ্য চাহিদাপূরণের জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। বদরপুর গ্রামের কৃষি সমাবেশে কৃষিবিদ ড. হাসান ফসল উৎপাদন, গৃহপালিত প্রাণী পালন, মৎস্য চাষ ও বনায়নের উপর নানা ধরনের কৃষি প্রযুক্তির ধারণা ব্যক্ত করেন। তুমি কী মনে কর কৃষি প্রযুক্তিগুলাে ব্যবহার করে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন সম্ভব?
নিচের প্রশ্নগুলাের উত্তরের মাধ্যমে তােমার মতামত উপস্থাপন করঃ-
১। কৃষি প্রযুক্তি কী?
২। কৃষি প্রযুক্তির বিষয়গুলাে কী কী?
৩। বিষয়ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তিগুলাের তালিকা তৈরি কর।
৪। জমি চাষ না করে কীভাবে তুমি দানা জাতীয় ফসল চাষ করবে?
৫। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামীণ পরিবেশে একজন কৃষক কীভাবে ডিম সংরক্ষণ করবে?
৬। বন্যা মৌসুমে হাওর এলাকায় তুমি কোন প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করবে এবং কেন?
৭। তুমি গবাদি পশুর একটি ফার্ম করতে চাইলে শীত মৌসুমে পশুগুলাের জন্য কীভাবে কাঁচাঘাসের অভাব পুরণ করবে?
answer:
কৃষি প্রযুক্তিঃ
যেসব পদ্ধতি দ্বারা জমি চাষ, বীজ বপন, আগাছা দমন, পোকামাকড় দমন, পানি সেচ দেওয়া, ফসল তোলা, মাড়াই-ঝাড়াই করা হয় সর্বোপরি কৃষি কাজ সম্পাদন করার জন্য যেসব পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করা হয় তা-ই কৃষি প্রযুক্তি।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়তি লােকের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু জমির পরিমান বৃদ্ধি পায়না বরং কমে যায়। তাই অল্প জমিতে অধিক ফসলের প্রয়ােজনে আমাদের কৃষি প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। কৃষি সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও কলাকৌশলকে কৃষি প্রযুক্তি বলে।
কৃষি প্রযুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলােঃ
(ক) এর মধ্যে নতুনত্ব থাকবে।
(খ) কৃষিকাজ সহজ করবে।
(গ) অধিক উৎপাদনের নিশ্চয়তা থাকবে।
(ঘ) খরচ করম কিন্তু লাভ বেশি হবে।
কৃষি প্রযুক্তির বিষয়গুলােঃ
কৃষি সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও কলাকৌশলকে কৃষি প্রযুক্তি বলে। কৃষি এখন শুধু ফসল উৎপাদনের ব্যাপার নয়। শুধু পশু- পাখি পালনও নয়। কয়েকটি উৎপাদন ক্ষেত্র নিয়ে কৃষির বিকাশ ঘটেছে। তেমনি প্রত্যেকটি উৎপাদন ক্ষেত্রের প্রযুক্তিও বিকাশ লাভ করেছে। ফসল উৎপাদন পশু-পাখি পালন, মৎস্য চাষ, বনায়ন এসব বিষয় নিয়েই কৃষি। তাই কৃষি প্রযুক্তি বলতে এই রিষয়গুলাে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে বুঝায়।
বিষয়ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তিগুলাের তালিকা তৈরি :
বিনা চাষে দানা জাতীয় ফসল চাষঃ
অনেক সময় জমি চাষ না করেই দানা জাতীয় ফসল যেমন- ভুট্টা চাষ করা যায়। বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে গেলে জমি কাঁদাময় থাকে। এমন সময় জমি চাষ না করেই ঐ জমিতে ভুট্টার বীজ রােপণ করলে ভাল ফলন হয়। এতে করে খরচ ও শ্রম দুটোই কম লাগে।
গ্রামীণ পরিবেশে ডিম সংরক্ষণঃ
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা হাঁস-মুরগির ডিম সংরক্ষণ করতে পারে। তবে তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়ােজন হয়। আবার বিদ্যুৎ ছাড়াও বিশেষ উপায়ে ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
নিম্নে এই পদ্ধতির বর্ণনা দেয়া হলােঃ
সাধারণত ডিম ৫/১০ দিনের বেশি ভাল থাকে না। ঘরের মেঝেতে গর্ত করে সেই গর্তে হাঁড়ি বসিয়ে ডিম রাখা যায়। গর্তে হাঁড়ির চারদিকে কাঠ কয়লা রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে ডিম ঠাণ্ডা থাকে এবং এভাবে ২০/২৫ দিন পর্যন্ত ডিম ভাল থাকে।
বন্যা মৌসুমে মাছ চাষ পদ্ধতিঃ
বন্যা মৌসুমে হাওড় এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ করা যায়। এটি এক ধরনের কৃষি প্রযুক্তি। এই পদ্ধতিতে শ্রোতহীন বা কম শ্রোতের পানিতে খাঁচা তৈরি করা হয়। খাঁচার উপরের দিকে মাছের খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই খাঁচার চারিদিকে জাল দিয়ে ঢাকা থাকে ফলে মাছ খাঁচার বাহিরে যেতে পারে না। বন্যা মৌসুমে হাওড় এলাকার পুকুর, বিলের পানি উছলে যায়। আর এই পানির সাথে চাষ করা মাছও বাহিরে চলে যায়। এর ফলে মাছ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
শীত মৌসুমে গবাদি পশুর জন্য কাঁচা ঘাসের ব্যবস্থাঃ
শীতকালে অনেক স্থানে ঘাসের অভাব দেখা দেয়। তখন পশুকে মানু সম্মত খাবার দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই বর্ষাকালে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতিকে সাইলেজ বলা হয়। এতে ঘাসের পুষ্টিমানের কোন পরিবর্তন হয় না। যে নির্দিষ্ট স্থানে বা গর্তে ঘাস রাখা হয় তাকে বলা হয় সাইলােপিট। এই স্থানে বায়ু রােধক অবস্থা তৈরি করা হয়। এই অবস্থায় ঘাসে লাষ্টিক এসিড তৈরি হয় যা কাঁচা ঘাস সংরক্ষণে কাজ করে। তাই শীতকালে গবাদিপশুর ফার্ম করতে চাইলে পশুর খাদ্য সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে উপরােক্ত পদ্ধতি প্রযােগ করা যাবে।
সাইলেজ তৈরির পদ্ধতি আলোচনা করা হলো –
- কাঁচা ঘাস সংরক্ষণের জন্য প্রথমেই শুকনা ও উঁচু জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।
- নির্ধারিত স্থানে এক মিটার গভীর, এক মিটার প্রস্থ এবং এক মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গর্ত তৈরি করতে হবে।
- ১ ঘনমিটার একটি গর্তে প্রায় ৭০০ কেজি কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করা যায়।
- কাঁচা ঘাসের শতকরা ৩-৪ ভাগ চিটাগুড় একটি চাড়িতে নিতে হবে।
- এরপর চিটাগুড় এর সাথে সমপরিমাণ পানি মিশাতে হবে।
- গর্তের তলায় পলিথিন বিছালে ভালো হয়। পলিথিন না বিছালে পুরু করে খড় বিছাতে হবে এবং চারপাশে ঘাস সাজানোর সাথে সাথে ঘরের আস্তরন দিতে হবে।
- এরপর ধাপে ধাপে ৭০০ কেজি কাঁচা ঘাস দিয়ে ২০-৩০ কেজি শুকনা খড় দিতে হবে।
- প্রতিটি ধাপে ১৫ থেকে ২০ কেজি চিটাগুড়-পানির মিশ্রণ সমভাবে ছিটাতে হবে।
- এভাবে ধাপে ধাপে ঘাস ও খড় বিছিয়ে ভালোভাবে পা দিয়ে পাড়াতে হবে, যাতে বাতাস বেরিয়ে যায়।
- ঘাস সাজানো শেষ হলে খড়ের আস্তরন দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- সর্বশেষে পলিথিনের উপর ৭.৫- ১০ সেন্টিমিটার মাটি পুরু করে দিতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কৃষি প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়ন সম্ভব।